শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১২:০৭ অপরাহ্ন
আশুলিয়া প্রতিনিধি : বাংলাদেশের একমাত্র পরিপূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর। এই বিশ্ব বিদ্যালয়ে ৭০০ একর জায়গায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। ক্যাম্পাসের পূর্বপাশে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেই ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। ক্যাম্পাসের পূর্ব-দক্ষিণ পাশে সিঅ্যান্ডবি হতে পূর্ব পশ্চিম পাশের বিশমাইল গেইট পর্যন্ত, প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের সিঅ্যান্ডবি থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশমাইল পর্যন্ত এলাকাটিতে কয়েকটি পয়েন্টে হরহামেশাই ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। এরমধ্যে মহাসড়কটির সাভার অংশের সিঅ্যান্ডবি বাসস্ট্যান্ড থেকে বিশমাইল পর্যন্ত কয়েকটি পয়েন্টে প্রায়ই অনেকে ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহাসড়কের এই অংশগুলোতে সড়কের দু’পাশ ঘন জঙ্গলবেষ্টিত। অপরাধীরা সহজেই সেখানে ওঁৎ পেতে থাকে এবং অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর সহজেই সেই জঙ্গলে গা ঢাকা দেয়। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও তাদের ধরতে ব্যর্থ হচ্ছেন বারবার।
স্থানীয়রা জানান, সিঅ্যান্ডবি থেকে বিশমাইল রিস্কা বা পায়ে হেঁটে চলাফেরা করা এখন আতংকে পরিণত হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেটের আগে ফাঁকা জায়গায় প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে হারাচ্ছে তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র।
টিপু নামের একজন পথচারী বলেন, আমি রিকশা দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম, প্রান্তিক গেটের সামনে আসার আগেই কয়েকজন লোক আমাদের রিকশার সামনে এসে দাড়িয়ে যায়। কিছু বোঝার আগেই একজন চাকু দিয়ে আমার হাতের বামপাশে কোপ দেয় এবং বাকি তিনজন আমার মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ নিয়ে পাশের জঙ্গলে হারিয়ে যায়। মূলত সন্ধ্যা লাগলেই সেই সময়ই অন্ধকারের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। আর এরজন্য তারা মূলত সড়কের পাশের ঘন জঙ্গলকেই দায়ী করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী জানান, আমি আমার বউকে নিয়ে সিএনবি থেকে রিকশা যোগে নবীনগর যাচ্ছিলাম। প্রান্তিক গেটের কাছে আসতেই পাঁচজন অল্প বয়সী ছেলে হাতে রামদা ও চাপাতি নিয়ে এসে আমার বউয়ের শরীরে থাকা সোনার চেইন, কানের দুল এবং হাতের চুরি ও নগদ টাকা ছিনেয়ে নিয়ে যায়।
পরে ছিনতাইয়ের শিকার ওই ভুক্তভোগী নারী, প্রান্তিক গেইটে এসে আতঙ্কে অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করেন।
এ ছাড়াও গত শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মীর মশাররফ হোসেন হলের গেইটের মাত্র কয়েকগজ দূরে ছিনতাইয়ের শিকার হন দুজন নারী যাত্রী। জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টারদিকে সড়কে চলন্ত একটি অটোরিকশার গতিরোধ করে এই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় প্রতক্ষ্যদর্শী রুবেল বলেন, সে সময় বিদ্যুৎ না থাকায় পুরো রাস্তাটি অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। হঠাৎ পাশের জঙ্গল থেকে চাপাতি এবং স্ট্যাম্প হাতে ৩ জন লোক বের হয়ে রাস্তায় থাকা একটি চলন্ত রিকশা থামায়। পরে দুজন নারী যাত্রীর কাছ থেকে মালামাল ছিনতাই করে সড়কের পাশে জঙ্গলে পালিয়ে যায়। পুরো ঘটনাটি চোখের পলকে মাত্র ২ মিনিটের মধ্যে ঘটে যায়। পরে ছিনতাইয়ের শিকার ওই ভুক্তভোগী নারী হলের গেইটে এসে আতঙ্কে অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করেন।
তিনি আরও বলেন, প্রতিনিয়তই সন্ধ্যার পর এ জায়গাটিতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীসহ সাধারণ যাত্রীরা মোটেও নিরাপদ নয়। তাই অতি দ্রুত এ জায়গায় সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন ও পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থা এবং সেখানের জঙ্গলগুলো দ্রুত পরিস্কার করে সকলের নিরাপত্তা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি। তবে সম্প্রতি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দুপাশের জঙ্গল পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সওজ। জঙ্গল পরিষ্কারের এ উদ্যোগকে সময়োপযোগী বলে মনে করছেন অনেকে। এতে করে সড়কে পথচারীদের ছিনতাই-ডাকাতির কবলে পরার ঘটনা অনেক কমবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তবে এই মহাসড়কের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সড়কগুলোতে এ কার্যক্রম পরিচালনার দাবি তাদের।
এ বিষয়ে সাভার হাইওয়ে থানার ওসি আজিজুল হক বলেন, আমি সদ্য এখানে জয়েন করেছি। আমি আসার পর তেমন কোন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেনি। আমাদের কাছে কেউ ছিনতাইয়ের ঘটনা নিয়ে আসে নাই। তবে আমি আসার পর এ ব্যাপারে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। যেমন অতিরিক্ত টহলের ব্যবস্থা এবং মোবাইল টিম গঠন।